সৌদি আরবের মদিনার মসজিদে নববীর পাশে সন্ত্রাসীর হামলা প্রসঙ্গে খুতবা দিয়েছেন ইমাম হুসেইন আলুস শেখ।
আজ শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবায় তিনি বলেন, জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর ইবাদতে অটল ও অবিচল থাকার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে রমজানের শেষ দিকে মসজিদে নববীর পাশে যে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে তার প্রতিবাদকে সামনে রেখে কিছু কথা বলেছেন।
Read More News
হে মুসলিম সম্প্রদায়, রমজানের শেষ মুহূর্তে, যে মুহূর্তটি ছিল মুসলমানদের আনন্দের সময়, তারা রোজাকে পরিপূর্ণ করতে পেরেছে, কিয়ামুল নাইম করেছে, কোরআনকে শেষ করার তৌফিক পেয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তেই মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করা হলো। তিনটি বোমা হামলা করা হলো এই সৌদি আরবে। এর চেয়ে নিকৃষ্ট, এর চেয়ে ন্যক্কারজনক, এর চেয়ে বড় পাপ, অপরাধ আর কী হতে পারে, যে এইভাবে মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করা। এরা কারা? এরা হচ্ছে সেই সব ব্যক্তি যারা ওহির জ্ঞান থেকে লাইনচ্যুত হয়েছে, যারা মুসলিম জামাত থেকে পৃথক হয়ে গেছে, যারা মুসলিম রাষ্ট্র থেকে দূরবর্তী অবস্থান করছে, যাদের কাজ হচ্ছে বিরাটভাবে মুসলমানদের ওপর বড় ধরনের ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা (নাউজুবিল্লাহ)।
যদিও তারা মনে করে, তারা ইসলামী হুকুমত চায়, তারা দ্বীন কায়েম করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পরিষ্কারভাবে জেনে যান, ইসলামের সাথে তাদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। তারা কী ভয় করে না সেই মহাপরাক্রম শক্তিশালী মহান আল্লাহ তায়ালাকে। তারা কী ভয় করে না? তাদের অবস্থান কোথায় হবে যেই মুহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের জিজ্ঞাসা করবেন, অন্যায়ভাবে এদের যে রক্ত ঝরানো হলো, এই সম্পর্কে কেয়ামতের দিন তাদের রব যখন জিজ্ঞাসা করবেন কী জবাব তারা দেবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওই সমস্ত গোলামগুলো, যারা আল্লাহর ইবাদতে রত, নামাজে যারা রত, যারা সিয়াম পালনকারী, অন্যায়ভাবে তাদের ওপর যে জুলুম করা হলো, তাদের হত্যা করা হলো, এমন এক জায়গায় যা হচ্ছে রাসুল (সা.) নির্মিত মসজিদের নিকটবর্তী জায়গায়, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম মাস রমজান মাসে, যে মুহূর্তে মানুষগুলো তাদের রবের আনুগত্যে প্রতিষ্ঠিত সেই মুহূর্তে এই পবিত্রতম জায়গায় তারা যে হত্যাকাণ্ড ঘটাল, তারা রক্ত ঝরালো, হত্যা করল কী জবাব দেবে তারা কিয়ামতের মাঠে?’
ইমাম সাহেব বলেন, কোন কোরআন তোমরা পড়েছ যে কোরআন তোমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে মুসলমানদের হত্যা করার জন্য, কোন রাসুলের আদর্শ তোমরা গ্রহণ করেছ যেই আদর্শ তোমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে, সেই ইবাদতকারী, এতেকাফকারী, আল্লাহর গোলামদের হত্যা করার জন্য? আমি আমার ভাষায় বলতে চাই, কোন পথ তোমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে এই সব নিরীহ মানুষের রক্তা ঝরাতে ইসলামের নাম দিয়ে? আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, তোমরা সেই পথের অনুসারী, যেই পথের অনুসারীরা, বা যেই ব্যক্তি হজরত উমর ফারুক (রা.)কে হত্যা করেছিল নামাজরত অবস্থায়, তোমরা সেই পথের অনুসারী যারা তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) কে হত্যা করেছিল। ওই সব হত্যাকারী নিজেদের শ্রেষ্ঠ ইমানদার বলে দাবি করেছিল। আজকের ওই সব যুবক মসজিদে নববীতে বোমা হামলা করে, এরপর মুসলমানদের ইবাদতখানায় হামলা করে, তারা নিজেদের কোন পথের যাত্রী বলে, কোন স্রষ্টাকে তারা সন্তুষ্ট করতে চায় আমি বুঝি না।
এরপর ইমাম সাহেব বলেন, হে যুবকগণ, শুন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। গিয়ে দেখ একটি নিকৃষ্ট চিন্তা মানুষকে কোন পথে নিয়ে যায়। যে চিন্তাটি তাদের মুসলিম জামাত থেকে বিচ্যুত হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। স্থিরভাবে চিন্তা কর।
ইমাম হুসেইন আলুস শেখ সন্ত্রাস ও জঙ্গি হামলায় যুক্ত যুবকদের তওবা করতে বলেন। তিনি একাকী বিচ্ছিন্নদের দল থেকে মুসলমানদের জামাতে ফিরে আসতে বলেন। তিনি বলেন, ধোকায় পড়েছ তোমরা। একাকীত্ব, গোপন পথ থেকে আল্লাহ সতর্ক করেছেন। ওইটা শয়তানের পথ। আল্লাহ শয়তানের পথ অনুসরণ করতে বারণ করেছেন।
৪ জুলাই সৌদি আরবের মদিনায় মসজিদে নববীর কাছে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর চার সদস্য নিহত হন। একই দিন সৌদি আরবের জেদ্দা ও কাতিফে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।