তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই পল্লীতে আতঙ্ক

বাড়ির ভাড়াটিয়াকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়া নাটোরের বনপাড়ার খ্রিস্টানপল্লীর মুদি ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ হত্যা মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলছেন, ‘এটা ক্লুলেস হত্যাকাণ্ড। ফলে রহস্য উদ্ঘাটনে দেরি হচ্ছে, যা অগ্রগতি আছে তার সবই তদন্তের স্বার্থে বলা যাচ্ছে না। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের পর ওই পল্লীতে আতঙ্ক কাটছে না। সব সময় হৈ-হুল্লোড়ে থাকা পল্লীটিতে এখন সুনসান নীরবতা বিরাজ করে। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে এসেছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মাসুদুর রহমান ভুঁইয়া। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জিসহ পুলিশের কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে অতিরিক্ত ডিআইজি মাসুদুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা মনে করি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আইএস জড়িত নয়। এটা পারিবারিক কারণে অথবা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ঘটানো হত্যাকাণ্ড। তবে কারণ যাই হোক না কেন শিগগিরই এর রহস্য সবার সামনে উন্মোচন করা হবে। পুলিশ সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ সময় উপস্থিত বনপাড়া পৌর মেয়র জাকির হোসেন বলেন, ৭৬ বছর ধরে বনপাড়ায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বাস। এই প্রথম এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটল এখানে। তিনি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশকে অনুরোধ জানান। জবাবে নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জি বলেন, বনপাড়ার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হৃদয়ের সম্পর্ক রয়েছে। এদের সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিরা আমন্ত্রিত হয়ে অংশ নেন। তাই আতঙ্কিত না হয়ে পুলিশকে তদন্তে সহযোগিতা করলে দ্রুত ঘটনার দ্বার উন্মোচন করা যাবে। অন্যদিকে ঘটনার চতুর্থ দিনেও মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় খ্রিস্টানপল্লীর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় অধিবাসীরা জানায়, সুনীল গোমেজ খুন হওয়ার আগে রাত ১২টা পর্যন্ত খ্রিস্টানপল্লী সরগরম থাকত। এখন সন্ধ্যার পর এলাকায় নেমে আসে সুনসান নীরবতা। ভয়ে কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। তারা দ্রুত ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সুনীল গোমেজের মেয়ে স্বপ্না গোমেজ মনে করেন, তাঁদের বাড়িতে মনি ও জামাই রফিক (ট্রাকচালক) ভাড়া থাকে। মনি প্রায়ই ঢাকায় থাকে। সম্প্রতি তাঁর বাবা সুনীল গোমেজ এ দম্পতিকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মনির বাবা মফিজ মাস তিনেক আগে হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁর বাবাকে সে সময় লাঞ্ছিতও করা হয়। একপর্যায়ে মফিজ কসাই দম্ভ ভরে বলেন, ‘মনি ও রফিক এই বাড়িতেই থাকবে। প্রয়োজনে আপনাকেই (সুনীল) বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।’ স্বপ্না বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আগে থেকেই মনি-রফিক বাড়িতে ছিল না। মৃত্যুসংবাদের পরও তারা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতেও আসেনি। তিনি পুলিশ সদস্যদের প্রতি এ ঘটনাও তদন্তের সময় মাথায় রাখার অনুরোধ করেন। গতকাল সাংবাদিকরা ওই বাড়িতে গেলে স্বপ্না এসব কথা বলেন। এ বিষয়ে সুনীল হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি ডিবি) আব্দুল হাই কালের কণ্ঠকে জানান, মামলা তদন্তের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। তদন্তের স্বার্থেই সব বলা যাচ্ছে না। মামলা দায়েরের পর নিহত সুনীলের বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুলা মামুন সবুজকে (ট্রাকের হেল্পার) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার আদালত সবুজের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার পর রাত থেকেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। নিহত সুনীল গোমেজের বাড়িতে আরো যেসব ভাড়াটিয়া রয়েছে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। তবে মামলাটি ক্লুলেস হওয়ায় রহস্য উদ্ঘাটনে বিলম্ব হচ্ছে। এদিকে এ হত্যা মামলার তদন্তে ডিবি পুলিশকে সহায়তা করছে ঢাকা থেকে আসা পুলিশের বিশেষ শাখার একজন উপপরিদর্শক ফরিদসহ দুই সদস্যের একটি টিম। এ ছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুনশী শাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম তদন্তকাজ তদারক করছেন। উল্লেখ্য, গত ৫ জুন দিনের বেলায় নিজ দোকানে মুদি ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পক্ষে এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করা হয়।
Read More News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *