ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল, অকটেনসহ বিভিন্ন প্রকার জ্বালানি তেলের দাম কমছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল বিজিনিউজকে জানান, এক সপ্তাহের মধ্যেই দাম কমানো হতে পারে। লিটারপ্রতি গড়ে ১০ টাকা কমতে পারে বলে তিনি জানান।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ৬ মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমানো হতে পারে। তবে তার আগে সড়ক ও নৌ পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় জ্বালানি তেলের দাম কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সোমবার বিডিনিউজকে বলেন, তিন ধাপে দাম কমানোর ইচ্ছা রয়েছে সরকারের। তিন ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপে দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়া হতে পারে এক সপ্তাহের মধ্যে। এর পর সড়ক ও নৌ পরিবহন মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ধাপগুলোতে দাম কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে তেলের দাম কত কমানো হবে, সে বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে। এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাধারণ মানুষের স্বার্থেই সরকার জ্বালানির দাম কমাতে চায়। দাম কমানোর সুবিধা সাধারণ মানুষের ঘরে যদি না যায়, তাহলে দাম কমিয়ে কোনো লাভ হবে না। ডিজেলের বড় অংশ ব্যয় হয় সড়ক ও নৌ পরিবহন খাতে। ডিজেলের দাম কমানোর সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনে যাত্রীভাড়া কমাতে হবে। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহন ভাড়াও কমাতে হবে। তা যদি না কমে তাহলে সাধারণ মানুষ জ্বালানির দাম কমানোর সুবিধা পাবে না। এ জন্য সরকার পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বসতে চায়।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ২০১৪ সালের জুন থেকে। দেশের শিল্পপতি-ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহল থেকে অনেক আগে থেকেই তেলের দাম কমানোর দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্তু দেশে এখন পর্যন্ত দাম কমানো হয়নি। জানা গেছে, তেল আমদানিকারক দেশের একমাত্র সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গত দেড় বছরে কম দামে জ্বালানি আমদানি করে বেশি দামে বিক্রি করে অনেক মুনাফা করেছে। মুনাফার অর্থ দিয়ে ইতিমধ্যে সব দায়দেনা পরিশোধও করেছে। কারণ একটা সময় ছিল, যখন বিপিসি বেশি দামে আমদানি করে কম দামে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করত। তখন ব্যাপক লোকসানের কবলে পড়ে। বিপিসির হাতে এখন প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা মুনাফা জমা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
Read More News
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আগামী কয়েক বছর স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মত আসছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকার সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে ফার্নেস অয়েলের দাম কমিয়ে প্রতি লিটার ৬০ টাকার স্থলে ৪২ টাকা করা হয়। এর পর এখন প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে অন্যান্য জ্বালানি তেলের দাম কমানোর।
দেশে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১২০ মার্কিন ডলার। দেশে তখন দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯, পেট্রোল ৯৬, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ এবং ফার্নেস তেল ৬০ টাকা করা হয়।