স্নায়ুযুদ্ধের সময় জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ফুলদা কাপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিপুল সেনা মোতায়েন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আবারো ইউরোপজুড়ে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধে সেনা মোতায়েন করতে হবে, যত বেশি যুক্তরাষ্ট্রের সাধ্যে কুলায়। কারণ ইউরোপের শান্তি-স্থিতিশীলতার দিন গেছে। ইউরোপে আমাদের যে প্রতিরক্ষা নীতি ছিল তা একই সাথে পুরনো, অকার্যকর ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। জোটবাহিনী পূর্বের দিকে এগোচ্ছে। আর ন্যাটোবাহিনী এখনো ফুলদা কাপের অপেক্ষায়। এই নীতি বর্তমান আন্তর্জাতিক কাঠামোতে সংস্কারবাদী রাশিয়াকে পুরো মঞ্চ ছেড়ে দিয়েছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। এসতোনিয়া ও তুরস্কে রাশিয়া ন্যাটোবাহিনীকে পরীক্ষা করে দেখেছে। সামরিকভাবে ন্যাটোর ওপর কতটা ভরসা করা যায় তা নিয়ে সন্দেহ করা যেতেই পারে।
Read More News
ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্্েরর সামরিক নেতৃত্ব আবারো হাতে তুলে নেয়া উচিত। সামরিক ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে কড়া অবস্থান গ্রহণ করে তাদের রাশিয়ার উসকানির জবাব দিতে হবে। ন্যাটোকে তার বর্তমান জার্মান-ইতালি রেখা থেকে পোল্যান্ড-রোমানিয়া রেখা বরাবর পুনঃমোতায়েন করতে হবে। এগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য এবং প্রথাগত যুদ্ধাবস্থার মধ্যেও সক্ষম ও সক্রিয় থাকতে হবে।
সামরিক বাহিনীর মোতায়েন ছাড়া ইউরোপে রাশিয়ার আগ্রাসী মনোভাব মোকাবেলার আর কোনো পথ খোলা নেই। কথার চেয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ অনেক বেশি শক্তিশালী বার্তা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে এমনটি বোঝার পরই রাশিয়া তাদের উসকানিমূলক তৎপরতা শুরু করে। সেনা পাঠানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের প্রতিরক্ষা দেয়ার বিষয়ে নিজ মনোভাবে একটি স্পষ্ট নির্ভুল বার্তা রাশিয়াকে পাঠাতে পারবে। এসটোনিয়া থেকে বুলগেরিয়া পর্যন্ত দেশগুলো কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। সে ক্ষেত্রে তার নিজ নিজ দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়েও মনোযোগ দিতে পারবে।
স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকেই ন্যাটো দেশগুলো নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। বেশির ভাগ দেশই তাদের প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশেরও কম বরাদ্দ রাখে। এখন যেহেতু রাশিয়া আবারো হুমকি হয়ে উঠেছে কাজেই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর এই বিষয়টি নিয়ে অভ্যাসও পাল্টাতে হবে। ন্যাটো সদস্যদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকেও ব্যয় বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি তুলতে হবে। এ পদক্ষেপ এক দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নিরাপত্তা দেয়ার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা কমাবে, একই সাথে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থাকে জোরদার করবে।
বর্তমানে ন্যাটো পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে ৫০০ থেকে হাজার সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। এই বাহিনী শক্তিশালী এবং দৃঢ় মনোবলের রুশ বাহিনী বা রাশিয়া সমর্থিত কোনো গোষ্ঠীকে লড়াইয়ে মোকাবেলার যোগ্যতা রাখে না। জার্মানি থেকে যে ন্যাটোবাহিনী যাচ্ছে তাদের জন্য দীর্ঘ সরবরাহ লাইন তৈরি করতে হবে। অথচ দখলকৃত ওই অঞ্চলে ইতোমধ্যেই ঘাঁটি গেড়েছে রুশ বাহিনী। সংক্ষিপ্ত সরবরাহ লাইন সত্ত্বেও শক্তিশালী সামরিক বাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র শুধু তার ন্যাটো মিত্রদেরই নয় বরং পশ্চিমের বন্ধুদেরও সুরক্ষা দিচ্ছে।
যদিও পূর্ব ইউরোপে সেনা মোতায়েন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ নিয়ে সমালোচনাও শুরু হবে খুব দ্রুতই। তবে ইউরোপকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে তার জন্য যে মূল্য শোধ করতে হবে তা কল্পনাতীত। পুনঃমোতায়েনকৃত ন্যাটো এবং রুশ বাহিনীর মধ্যে ভৌগোলিকভাগে একটি বাফার জোন থাকবে। ফলে দুর্ঘটনাবশত সংঘর্ষের আশঙ্কাও অনেকটা কম।
কঠিন রূঢ়তার মুখে কঠোর ব্যবস্থা নেয়াই সমাধানের একমাত্র পথ। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন পশ্চিমা রাজনীতি, অর্থনীতি ও নিরাপত্তার বিকল্প একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বল পররাষ্ট্র নীতির কারণে তার এই পরিকল্পনা অনেকাংশে সফলও হচ্ছে। উসকানি দেয়ারও সাহস পাচ্ছে তারা। পোল্যান্ড রোমানিয়া নিরাপত্তা লাইনে বিশ্বাসযোগ্য ও শক্তিশালী সেনাবাহিনীর পুনঃমোতায়েনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আগামী কয়েক দশকের জন্য মহাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে পারে।