ঢাকাই সিনেমার সত্তর-আশির দশকের অ্যাকশন চিত্রনায়ক ওয়াসিম (৭৪) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে এই নায়কের মৃত্যু হয়।
হাসপাতালটির ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার বলেন, ‘উনাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে আমরা ইসিজি করি, তারপর উনাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। কী কারণে উনার মৃত্যু হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত না। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হতে পারে। তবে তার কিডনির সমস্যা ও ডায়াবেটিস ছিল বলে আমরা পরিবারের কাছ থেকে জেনেছি।’
চিত্রনায়ক ওয়াসিম প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান জানিয়েছেন, তিনি (ওয়াসিম) নানা শারিরীক জটিলতায় ভুগছিলেন। বেশ কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন।
এমন সফল ক্যারিয়ারের চিত্রনায়ক এক সময়ে এসে সিনে পর্দার দুনিয়াকে বিদায় জানিয়েছিলেন। আর এই বিদায়ের কারণ হিসেবে ছিল তাঁর স্ত্রী-কন্যার অকাল মৃত্যু। ২০০০ সালে তাঁর স্ত্রীর অকাল মৃত্যু হয়। সেই শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০০৬ সালে ওয়াসিমের কন্যা বুশরা আহমেদ চৌদ্দ বছর বয়সে স্কুলের পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। মূলত এই দুই ঘটনা ওয়াসিমের জীবনে বিষাদ নেমে আসে। সব কিছু থেকে দূরে সরে যান তিনি। বেছে নেন একাকী জীবন।
Read More News
স্কুলজীবন থেকে মনোযোগী ছিলেন শরীরচর্চায়। কলেজে পড়া অবস্থায় নাম করেছিলেন বডি বিল্ডার হিসেবে। শুধু নাম নয়, ১৯৬৪ সালে বডি বিল্ডিংয়ের জন্য মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান খেতাব অর্জন করেছিলেন তিনি। গেল বছর এক সাক্ষাৎকারে এমন তথ্যই জানিয়েছিলেন দেড় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করা ওয়াসিম।
প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক এস এম শফীর হাত ধরে চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক ঘটে ওয়াসিমের। ১৯৭২ সালে শফী পরিচালিত ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’ চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হন তিনি। এতে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেন। ১৯৭৪ সালে আরেক প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ চলচ্চিত্রে প্রথম নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ তার। চলচ্চিত্রটির অসামান্য সাফল্যে রাতারাতি সুপারস্টার বনে যান তিনি। তবে ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া এস এম শফী পরিচালিত ‘দি রেইন’ সিনেমা তাঁকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।
হাতেগোনা অল্প কিছু সিনেমা ছাড়া তাঁর প্রতিটি সিনেমাই সুপারহিট হয়েছিল। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে শীর্ষ নায়কদের একজন ছিলেন তিনি
আজ বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে প্রথম জানাজার পর বনানী কবরস্থানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে সেখানেই তাঁকে দাফন করা হবে।