করোনার মধ্যেই আমেরিকায় জ্বলছে বিদ্বেষের আগুন

করোনার দাপটের মধ্যেই আমেরিকায় জ্বলছে বিদ্বেষের আগুন। সেই আগুনে ঘি ঢালার কাজ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! টুইটারে বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দিলেন, ‘লুঠ শুরু হলে, শুট (গুলি) শুরু হবে।’

ট্রাম্পের টুইটের পর মিনেসোটার থানায় আগুন লাগান বিক্ষোভকারীরা। প্রাণ বাঁচাতে পালান পুলিশকর্মীরা, চলে দেদার ভাঙচুর, লুঠপাট। ক্ষোভের আগুন ছড়িয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয়, লস অ্যাঞ্জেলিস, শিকাগো, মেমফিস, টেনেসিতেও। সেখানেও পথে নেমেছেন শয়ে শয়ে কৃষ্ণাঙ্গ। ট্রাম্পের এই বিতর্কিত টুইট লুকিয়ে দিয়েছে টুইটার। তার জায়গায় লিখে দেওয়া হয়েছে, ‘হিংসায় প্ররোচনা দেওয়ার বিধি লঙ্ঘন করেছে এই টুইট।’ এমনকী, প্রেসিডেন্টের টুইট শুক্রবার সকালে নতুন করে পোস্ট করা হয়েছিল হোয়াইট হাউসের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে। সেখানেও একই বার্তা সেঁটেছে টুইটার। বিতর্কিত টুইটটি যাতে বেশি সংখ্যায় মানুষের কাছে পৌঁছতে না পারে, সেই ব্যবস্থাও নিচ্ছে টুইটার। কোনও দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষেত্রে সম্ভবত এমন নজির নেই।

এ দিকে, হিংসার খবর সংগ্রহে গেলে গ্রেপ্তার করা হয় সিএনএন-এর কৃষ্ণাঙ্গ সাংবাদিককে। তাতে মানুষের ক্ষোভ আরও বেড়ে গিয়েছে। প্রেসিডেন্ট এবং প্রশাসনের এমন আচরণের বিরুদ্ধে সরব প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের ডেমোক্র্যাট প্রতিপক্ষ জো বাইডেন। যে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারের হাঁটুর চাপে প্রাণ গেল কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির, তিনি বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ কাজ করতে গিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ সাংবাদিক কেন গ্রেপ্তার হলেন, প্রশ্ন বাইডেনের। এ দিকে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, ‘বর্ণবিদ্বেষ ২০২০-র আমেরিকায় স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না।’

বিচারের দাবিতে পথে নামা মানুষকে ট্রাম্প যে ভাবে ‘লুঠেরা’ বলে দাগিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে সরব বিভিন্ন মহলের লোকজন। তাঁদের প্রেসিডেন্টকে মনে করাতে চান সেই পাঁচ মিনিটের কথা, যখন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারের হাঁটু চেপে বসেছিল জর্জ ফ্লয়েডের কালো ঘাড়ের উপর। সেই চাপ যখন সরে, ততক্ষণে আর প্রাণ নেই জর্জের শরীরে।
Read More News

ঘটনার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর থেকে প্রতিবাদে উত্তাল আমেরিকা। বুধবার রাত থেকে বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়। বৃহস্পতিবার থেকে পরিস্থিতি কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে। শুক্রবার সকালে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে মিনেসোটায়। তাতেও অবশ্য বিক্ষোভে লাগাম পরেনি। মিনেসোটায় এক বিক্ষোভকারীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর মিলেছে। ঘটনায় এক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিবাদ মিছিল থেকে পুলিশ ভ্যানের উপর হামলাও হয়।

জর্জের মৃত্যুতে অভিযুক্ত চার পুলিশকর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, খুনের মামলা শুরু করতে হবে তাঁদের বিরুদ্ধে। একই দাবি মৃতের পরিজনের। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে শাস্তির দাবি তুলেছেন মিনেসোটার মেয়র জেকব ফ্রে। বিক্ষোভকারীদের এখন একটাই বক্তব্য, ‘কৃষ্ণাঙ্গের জীবনেরও মূল্য আছে, সেটা বুঝতেই হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *