কলকাতায় টিউশনি করতেন বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আব্দুল মাজেদ কলকাতায় নিজেকে আলি আহমেদ নামে পরিচয় দিতেন। আর তিনি যে এলাকায় থাকতেন, সেই এলাকার লোকেরা তাকে মাস্টার মশাই হিসেবেই চিনতেন। কেননা তিনি এলাকায় টিউশনি করতেন।

সোমবার (১৩ এপ্রিল) কলকাতার বর্তমান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
Read More News

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে থাকতেন খুনি মাজেদ। সেখানে তিনি ইংরেজির মাস্টার মশাই নামে পরিচিত ছিলেন। পার্ক স্ট্রিটের বাসিন্দারা জানতেন তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে পাস করেছেন। টিউশনি করে সংসার চালাতেন।

২০১১ সালে মাজেদ তার ৩২ বছরের ছোট এক নারী সেলিনা বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের ৬ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে মাজেদের শরীর ভালো যাচ্ছিল না। সে কারণে তিনি চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেন।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি কলকাতার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসার রিপোর্ট আনতে গিয়েছিলেন। তারপর আর বাড়িতে ফেরেননি। মাজেদ বাড়িতে না ফেরায় তার স্ত্রী পার্ক স্ট্রিটি থানায় মিসিং ডায়েরি করেন।

সিসিটিভির ফুটেজ দেখে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা ৪ মিনিটে কলকাতার বেডফোর্ড লেনের ভাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর একটি ওষুধের দোকানে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি আব্দুল মাজেদ। সেখানে মিনিট আটেক থাকার পর ঠিক ১০টা ১২ মিনিটে রিপন স্ট্রিটের দিকে মুখ করে ফের পথ চলতে শুরু করেন। তখন থেকেই তাকে অনুসরণ করা শুরু করে দুই ব্যক্তি। পরে তাদের সঙ্গে আরও দুজন যোগ দেন। মোট চারজন সেদিন পিছু নিয়েছিলেন মাজেদের। সিসিটিভির ফুটেজে সবার ছবি ধরা পরে।

তদন্তে নেমে পুলিশ ও এসটিএফ-এর কর্মকর্তারা পিছু নেওয়া ওই স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের কাবুলিওয়ালা ভেবে প্রথমে ভুল করেছিল। কারণ মাজেদ ছোটখাট সুদের ব্যবসা করতেন।

এরপর আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ধরে রাস্তা পার হয়ে এজেসি বোস রোডে আসেন মাজেদ। উদ্দেশ্য বাস ধরা। গন্তব্য কলকাতার পিজি হাসপাতাল।

এর পরের ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ওই চারজন মাজেদের সঙ্গে কথা বলছে। তবে ক্যামেরা উন্নত না হওয়ায় কী কথা হয়েছিল, তা শোনার উপায় নেই। ঠিক তখনই মৌলালির দিক থেকে আসা একটি সল্টলেক-সাঁতরাগাছি রুটের বাসে উঠতে দেখা যায় মাজেদকে। যথারীতি সেই বাসে চাপেন ওই চারজনও। এরপর আর কোনও ফুটেজ নেই।

তদন্তে নেমে পুলিশ এজেসি বোস রোডের প্রতিটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বাস স্টপ থেকে পিজি হাসপাতাল পর্যন্ত কোথাও বাস থেকে নামতে দেখা যায়নি আব্দুল মাজেদকে।

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক সূত্র জানিয়েছে, মাজেদের মোবাইলের সর্বশেষ টাওয়ার লোকেশন ছিল মালদহ। যা থেকে গোয়েন্দাদের অনুমান, মাজেদ ঘুরপথে হাওড়া স্টেশনে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ট্রেনে প্রথমে গুয়াহাটি। পরে শিলং হয়ে ডাওকি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ আসেন তিনি।

এরপর গত ৭ এপ্রিল ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুর খুনি আব্দুল মাজেদকে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত শনিবার মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর হয়।

এদিকে গত ৭ এপ্রিল মাজেদ ঢাকায় গ্রেফতারের পর পার্ক স্ট্রিটের স্থানীয় বাসিন্দারা জানতে পারেন এলাকার সেই মাস্টার মশাই আসলে বঙ্গবন্ধুর খুনি। তারা জেনে অবাক হন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *