রাজধানীর রামপুরা বনশ্রীতে খাবারের বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যুর কথা বলা হয়েছিল পরিবারের পক্ষ থেকে- তবে ময়নাতদন্তে পাওয়া গেছে হত্যার আলামত। তাদের গলা ও থুতনিতে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। দুজনেরই জিহ্বা ছিল কামড়রত। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব। তারা হলেন- ভবনের দুই দারোয়ান, দুই গৃহশিক্ষিকা এবং এক আত্মীয়।ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইস্কাটন শাখার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল ইশরাত জাহান অরণী (১৪) ও তার ছোটভাই হলি ক্রিসেন্ট স্কুলের নার্সারির ছাত্র আলভী আমান (৬)। সোমবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। তাদের বাবা আমানুল্লাহ একজন পোশাক ব্যবসায়ী।
মায়ের নাম মাহফুজা মালেক জেসমিন। রামপুরা বনশ্রীর বি ব্লকের চার নম্বর রোডে তাদের বাসা।শিশু দুটির খালা আফরোজা মিলা হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রোববার রাতে একটি চায়নিজ রেস্তরাঁয় খাওয়া-দাওয়া করেছিলেন তারা। খাবারের অবশিষ্টাংশ বাসায় আনা হয়। বাসায় ফিরে অরণী ও আলভী ঘুমিয়ে পড়ে। সোমবার দুপুরে ওই বাকি খাবার গরম করে খেয়েছিল তারা। এরপর ঘুমিয়ে পড়লে আর ঘুম থেকে ওঠেনি।আমানুল্লাহর বন্ধু জাহিদ জানান, বিকালের পর অনেক ডাকাডাকির পরও শিশুদের কোনো সাড়া না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন তাদের মা। পরে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত্যুর কথা বলে দেন।ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল মাহমুদ বলেন, দুটি শিশুর গলায় তারা ‘দাগ’ পেয়েছেন। সেখানে আঙুলের ছাপও ছিল। থুতনিসহ বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। দুজনেরই জিহ্বায় কামড় লেগে ছিল। তাদের শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, আমি সেভাবে বলব না। তবে অক্সিজেনের অভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে।তিনি জানান, খাবারের বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিলেন।
Read More News
এ কারণে তাদের পাকস্থলিতে যে খাবার পাওয়া গেছে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য। কিছু নমুনা মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।লাশের ময়নাতদন্ত করেছেন এমন একজন চিকিৎসক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, দুটি শিশুর জিহ্বা কামড়রত অবস্থায় ছিল। সাধারণত কাউকে গলা টিপে হত্যা করলে জিহ্বা কামড়রত থাকে। তা ছাড়া দুটি শিশুর চোখেও রক্ত জমাট বাঁধা অবস্থায় ছিল। গলায় নখের আঁচড় ছিল।ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর শিশু দুটির বাসা রামপুরা বনশ্রীর বি ব্লকের চার নম্বর রোডের বাসা থেকে দুই দারোয়ান, গৃহশিক্ষিকা ও এক স্বজনকে র্যাব-৩ এর ক্যাম্পে নেয়া হয়। র্যাব-৩ এর কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোস্তাক আহমেদ জানিয়েছেন, ঘটনা তদন্তের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা আটক বা গ্রেফতার নয়। বিষয়টি জানার জন্য তাদের এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।পরিবারের সদস্যরা জানান, ময়নাতদন্ত শেষে দুই শিশুর লাশ জামালপুরে গ্রামের বাড়িতে নেয়ার পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়।রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। তবে ‘কেন্ট’ নামে বনশ্রীর যে রেস্তরাঁর খাবার তারা খেয়েছিল, তার ম্যানেজার মামুনুর রহমান মাসুদ, প্রধান বাবুর্চি আসাদুজ্জামান রনি ও তার সহযোগী আতাউরকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।