করোনা আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার হার কমছে

দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার হার দিন দিন কমছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এ হার ৭ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। অন্যদিকে হাসপাতালে ফাঁকা থাকা শয্যার সংখ্যাও বাড়ছে। মোট শয্যার প্রায় ৬৮ শতাংশ শয্যাই ফাঁকা পড়ে আছে।
Read More News

এমন অবস্থা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা দুই রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। কেউ বিষয়টিকে দেখছেন ইতিবাচকভাবে। আবার কেউ বলছেন এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাবের কথা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুরুর দিকে হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে হয়রানি, দুর্ভোগ এবং এরপর হাসপাতালে অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষের মধ্যে যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছিল সেটাই তাদের হাসপাতালবিমুখ করে তুলেছে। এ কারণেই মানুষ ঘরে ঘরে ‘মিনি হাসপাতাল’গড়ে তুলেছে। তাঁরা এর বিপদের দিকটি তুলে ধরে সতর্ক করেছেন।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, অপ্রয়োজনে হাসপাতালে ছোটাছুটি করার ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। এ ছাড়া টেলিমেডিসিনসেবা বাড়ায় হাসপাতালের ওপর চাপ কমেছে।

রাজধানীর বাসিন্দা শরীফ আগে থেকেই হৃদেরাগ ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন। গত সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় পড়েছেন জটিল পরিস্থিতির মুখে। স্বজনরা তাঁকে অনেকভাবে বুঝিয়ে-শুনিয়ে হাসপাতালে নিতে রাজি করাতে পারেননি। কারণ জানতে চাইলে শরীফের সাফ কথা, ‘হাসপাতালে যাইতে ভয় করে। শুনছি, সেখানে নাকি আমার কাছে আর কাউরে যাইতে দিবে না। আবার ডাক্তার-নার্সরাও নাকি ঠিকমতো আসে না। আমি অসুস্থ, আমারে বাথরুমে কে নিয়ে যাবে? আমার কাপড়চোপড় কে ধুয়ে দিবে? বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে খাওয়াদাওয়া চলবে কেমনে? তার চেয়ে আমি বাসায় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে থাকি, যা হয় হবে!

রাজধানীর বাসিন্দা রুবা আক্তারের বক্তব্য, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই বলছে, শ্বাসকষ্ট না হলে হাসপাতালে যাওয়ার দরকার নাই। আমার ডায়াবেটিস আছে, কিডনিতেও একটু সমস্যা আছে। কিন্তু এখনো শ্বাসকষ্ট নাই। হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না।

একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, আমি ও আমার পরিবারের পাঁচজন করোনা পজিটিভ। সঙ্গে সঙ্গে বাসায় অক্সিমিটার, দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও আইভারমেকটিন, ডক্সিক্যাপ, এজিথ্রোমাইসিন, প্যারাসিটামলসহ আরো কিছু ওষুধ এনে রেখেছি আমার এক ডাক্তার বন্ধুর পরামর্শে। যদিও এখন পর্যন্ত প্যারাসিটামল, আইভারমেকটিন, ডক্সিক্যাপ ছাড়া আর কিছু ব্যবহার করা লাগেনি। আপাতত হাসপাতালে যাওয়া নিয়ে চিন্তা করছি না। কারণ প্রাইভেট হাসপাতালে গেলে সেখানে লাখ লাখ টাকা লাগে, আবার সরকারি হাসপাতালে রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। তাই যতক্ষণ পারি বাসায় থাকব।

রোগতত্ত্ববিদ বলছেন, বিত্তবান অনেকের ঘরে এখন রীতিমতো ‘মিনি হাসপাতাল’গড়ে উঠেছে। কিন্তু তাতেও আমরা শেষ রক্ষা দেখতে পাচ্ছি না। যাদের আগে থেকে বিভিন্ন রোগের জটিলতা আছে তাদের করোনা আক্রান্ত হলে হাসপাতালে যাওয়া জরুরি।

ড. মুশতাক বলেন, যারা নিজেদের উপসর্গ ঠিকমতো বুঝতে পারছে না কিন্তু অবাধে ঘোরাফেরা করছে তারা যেমন নিজের ক্ষতি করছে, অন্যদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছে। শনাক্ত হলে উপসর্গ না থাকলেও তাদের আইসোলেশনে থাকতে হবে। কিন্তু অনেকেই সেটা করছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও এখন আক্রান্তদের মধ্যে যারা বাসাবাড়িতে আছে তাদের প্রায় ৮০ শতাংশকে টেলিমেডিসিনসেবা দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে রেড জোনগুলোর রোগীদের মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। যদি কেউ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি জরুরি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *